
ঢাকা: এক্সিম ব্যাংক তাদের পরিকল্পিত একীভূতকরণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে। দীর্ঘ নয় মাস পর আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দেওয়া এক বিবৃতিতে ব্যাংকটি জানিয়েছে যে, পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তটি বাতিল করা হয়েছে।
এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সোমবার এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে সিদ্ধান্তের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রথম স্বেচ্ছায় একীভূতকরণ পরিকল্পনা ছিল ঐতিহাসিক উদ্যোগ
২০২৪ সালের ১৮ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক সদর দপ্তরে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সইয়ের মাধ্যমে পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটি ছিল দেশের বেসরকারি দুটি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম স্বেচ্ছায় একীভূতকরণের উদ্যোগ।
পদ্মা ব্যাংক, যা ২০১৩ সালে ফারমার্স ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল এবং পরে নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক হয়, শুরু থেকেই ঋণ অনিয়ম ও খেলাপি ঋণের জন্য সমস্যায় ছিল। ব্যাংকটি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারি ১,৭০০ কোটি টাকার সহায়তা প্যাকেজ পেলেও তা কার্যকর হয়নি।
পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক চ্যালেঞ্জ
২০২৩ সালের শেষে, পদ্মা ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৫,৭৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩,৫৫০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের হার ছিল প্রায় ৪৭%। ব্যাংকটির মূলধনের ঘাটতি ছিল ৬০৭ কোটি টাকা এবং তাদের সম্পদের চেয়ে দায়বদ্ধতা ৫,০০০ কোটি টাকা বেশি ছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকটির আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরানোর জন্য বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সুবিধা এবং সরকারি প্রণোদনা প্রদান করা হলেও এটি গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে।
একীভূতকরণের প্রত্যাশা ও প্রতিবন্ধকতা
একীভূতকরণের মাধ্যমে এক্সিম ব্যাংক বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক প্রণোদনা পাওয়ার আশা করেছিল, যার মধ্যে ন্যূনতম মূলধন প্রয়োজনীয়তা এবং প্রভিশনিং বিধিমালা শিথিল করার সুবিধা অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক সংকট এবং অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ এই প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
এক্সিম ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এই একীভূতকরণকে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তবে ব্যাংকটির চলমান আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং ঋণ পুনরুদ্ধারে ব্যর্থতা এই উদ্যোগে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
উপসংহার
একীভূতকরণ প্রক্রিয়া বাতিলের ফলে পদ্মা ব্যাংকের ভবিষ্যৎ এখন আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই সিদ্ধান্ত দেশের ব্যাংক খাতে নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং সরকারি হস্তক্ষেপের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
দেশের আর্থিক খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে।