বাজার ঝুঁকি (Market Risk) হলো আর্থিক বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি বা বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগের মূল্যহ্রাসের সম্ভাবনা। এটি এমন একটি ঝুঁকি যা সম্পূর্ণ বাজারের ওঠানামার সাথে সম্পর্কিত এবং নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানি বা সেক্টরের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।
বাজার ঝুঁকের প্রধান ধরনসমূহ:
১. বৈধ ঝুঁকি (Systematic Risk):
- এটি এমন ঝুঁকি যা পুরো বাজারকে প্রভাবিত করে এবং প্রতিটি বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সুদের হার পরিবর্তন ইত্যাদি।
২. অবৈধ ঝুঁকি (Unsystematic Risk):
- এটি নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানি বা সেক্টরের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি। যেমন, কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির পরিচালনায় সমস্যা, নতুন প্রতিযোগীর আগমন ইত্যাদি।
উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা:
১. অর্থনৈতিক মন্দা:
অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে সাধারণত বাজারের সব স্টকের দাম কমে যায়। যেমন, ২০০৮ সালের গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইসিসের সময় বিশ্বব্যাপী স্টক মার্কেট ব্যাপকভাবে পতিত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের S&P 500 সূচক ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে প্রায় ৫০% হ্রাস পেয়েছিল।
২. সুদের হার পরিবর্তন:
সেন্ট্রাল ব্যাংক সুদের হার বাড়ালে ঋণের খরচ বৃদ্ধি পায়, যা ব্যবসার লাভ কমিয়ে দেয় এবং স্টকের দাম কমতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার বাড়ানোর সংকেত দেওয়ার পর মার্কিন স্টক মার্কেটে কিছুটা অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল।
৩. রাজনৈতিক অস্থিরতা:
রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন বীরত্বপূর্ণ নির্বাচন, বিপ্লব, বা যুদ্ধের পরিস্থিতি বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রেক্সিট রেফারেন্ডামের পরে যুক্তরাজ্যের স্টক মার্কেটে উল্লেখযোগ্য অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল।
তথ্য ও পরিসংখ্যান:
- বৈধ ঝুঁকি: গবেষণায় দেখা গেছে যে বৈধ ঝুঁকি বিনিয়োগকারীদের জন্য সর্বাধিক ক্ষতিকর হতে পারে কারণ এটি সম্পূর্ণ পোর্টফোলিওকে প্রভাবিত করে। বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, বৈধ ঝুঁকি মোট ঝুঁকির প্রায় ৮০-৯০% গঠন করে।
- বাজারের ভোলাটিলিটি (Volatility): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের VIX সূচক, যা বাজারের প্রত্যাশিত ভোলাটিলিটির মাপকাঠি, ২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারীর সময় শীর্ষে ৮২.69 পৌঁছেছিল, যা ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পরের সর্বোচ্চ ছিল।
বাজার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উপায়:
- বিভিন্নীকরণ (Diversification): বিভিন্ন ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো যায়। যেমন, স্টক, বন্ড, রিয়েল এস্টেট ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করা।
- হেজিং (Hedging): আর্থিক যন্ত্রপাতি যেমন অপশন এবং ফিউচার ব্যবহার করে ঝুঁকি কমানো।
- অ্যাসেট অ্যাসাইনমেন্ট (Asset Allocation): বিভিন্ন সম্পদ শ্রেণীতে বিনিয়োগের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা।
উপসংহার:
বাজার ঝুঁকি বিনিয়োগের অচিহ্নিত কিন্তু অত্যন্ত প্রভাবশালী অংশ। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ যে তারা বাজার ঝুঁকিকে বুঝে এবং উপযুক্ত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল গ্রহণ করে তাদের বিনিয়োগের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। তথ্য এবং পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বাজার ঝুঁকির প্রভাব স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়।