সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি কি কি?
বর্তমান ডিজিটাল যুগে সাইবার নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বীমা এবং স্টক মার্কেটের মতো সংবেদনশীল খাতে তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ব্যবসার স্থায়িত্ব এবং গ্রাহক আস্থার জন্য অপরিহার্য। তবে, সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকির বিভিন্ন ধরন বিদ্যমান, যা সচেতন হওয়া জরুরি।
১. ফিশিং আক্রমণ (Phishing Attacks):
ফিশিং হলো একটি সাইবার অপরাধ যেখানে আক্রমণকারী ভুয়া ইমেইল বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে অনেক বীমা গ্রাহকরা ভুয়া ইমেইলের মাধ্যমে তাদের পাসওয়ার্ড বা ব্যাংক বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করে ফেলেন, যা আক্রমণকারীদের দ্বারা ব্যবহার করা হতে পারে।
২. ম্যালওয়্যার এবং র্যানসমওয়্যার (Malware and Ransomware):
ম্যালওয়্যার হলো ক্ষতিকারক সফটওয়্যার যা কম্পিউটার বা নেটওয়ার্কে অননুমোদিত প্রবেশের মাধ্যমে তথ্য চুরি বা ধ্বংস করতে পারে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ব্যাংক এবং বীমা প্রতিষ্ঠান ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হয়, যার ফলে তাদের গ্রাহকদের তথ্য নষ্ট হয়।
৩. ডাটা ব্রিচ (Data Breaches):
ডাটা ব্রিচ ঘটে যখন সংবেদনশীল তথ্য অননুমোদিতভাবে প্রকাশ পায়। বাংলাদেশের স্টক ব্রোকারেজ ফার্মগুলোতে কিছু ডাটা ব্রিচের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বিনিয়োগকারীদের ব্যক্তিগত এবং আর্থিক তথ্য চুরি হয়।
৪. সার্ভিস অবায়াল (Service Denial) আক্রমণ (DDoS Attacks):
DDoS আক্রমণে একটি ওয়েবসাইট বা সার্ভিসকে অতিরিক্ত ট্রাফিকের মাধ্যমে অকেজো করে দেওয়া হয়। ২০২২ সালে কিছু বড় স্টক এক্সচেঞ্জ ও বীমা সংস্থাগুলো DDoS আক্রমণের শিকার হয়, যা তাদের সেবায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
৫. ইনসাইডার থ্রেট (Insider Threats):
ইনসাইডার থ্রেট হলো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ কর্মী বা সহযোগীদের দ্বারা তথ্যের অপব্যবহার। বাংলাদেশে কিছু বীমা কোম্পানিতে কর্মীদের মাধ্যমে গ্রাহকের তথ্য অবৈধভাবে ব্যবহার করার ঘটনা ঘটেছে।
সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয়:
১. শিক্ষা ও সচেতনতা: কর্মীদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
২. উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার: শক্তিশালী ফায়ারওয়াল, এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এবং এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার।
৩. নিয়মিত সিকিউরিটি অডিট: সিস্টেমের দুর্বলতা শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত সিকিউরিটি অডিট করা।
৪. দু’ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA): ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে 2FA প্রয়োগ করা।
৫. ডাটা ব্যাকআপ: গুরুত্বপূর্ণ ডাটা নিয়মিতভাবে ব্যাকআপ রাখা যাতে ডাটা লসের ক্ষেত্রে পুনরুদ্ধার করা যায়।
উপসংহার:
সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলা করা বাংলাদেশের বীমা ও স্টক মার্কেটের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অপরিহার্য। কার্যকরী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে পারে এবং গ্রাহকদের আস্থা বজায় রাখতে পারে। ডিজিটাল নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এই ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।