দেশের রিজার্ভ ২৫.১৪ বিলিয়ন ডলার (অক্টোবর ২০২৪ )

নন-লাইফ বীমাকারীসমূহের পুনঃবীমা বিষয়ে কর্তৃপক্ষে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভার কার্যবিবরণী।

“সভার সভাপতি “,”: জনাব মোহাম্মদ জয়নুল বারী ” ,”চেয়ারম্যান, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ” “সভার স্থান “,”: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষ-১ ” “সভার তারিখ “,”: ২০/০৫/২০২৪ ” “সময় “,”: বেলা ১১:৩০ ঘটিকা “

তারিখ: ০৯ জুন, ২০২৪ খ্রিঃ

সভাপতি উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে সভার কার্যক্রম আরম্ভ করেন। তিনি বলেন যে, নন-লাইফ বীমাখাতে পুনঃবীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বাংলাদেশের বীমা খাতে একমাত্র পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান। বীমা কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী সকল বীমা প্রতিষ্ঠানকে তাদের পুনঃবীমাযোগ্য অংশের ৫০% সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সাথে পুনঃবীমা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একারণে সকল নন লাইফ বীমা কোম্পানীর নিকট সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পুনঃবীমা প্রিমিয়াম ও বকেয়ার বীমা দাবী পরিমাণ নিয়ে একটি জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। বীমা শিল্পের অগ্রগতির জন্য এ সংকট নিরসন হওয়া প্রয়োজন। অত:পর সভার সভাপতি কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (নন-লাইফ), জনাব মোঃ সোলায়মানকে সভার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে উপস্থাপন করার আহ্বান জানালে তিনি তা সংক্ষেপে তুলে ধরেন।

০১। আলোচনা:

জনাব মোঃ সোলায়মান তাঁর উপস্থাপনায় সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সাথে নন- লাইফ বীমা খাতের পুনঃবীমার চিত্র সংক্ষেপে তুলে

ধরেন:

বীমাকারীর অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে বীমা দাবী দ্রুত নিষ্পত্তি করা। উপস্থাপিত তথ্য বিশ্লেষণে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ও বীমা কোম্পানীসমূহের দেনা-পাওনার হিসাবে ব্যাপক তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। সভার সভাপতি উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের নিকট মতামত জানতে চাইলে নিম্নোক্ত মতামত ব্যক্ত করেন:

সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন– ফার্স্ট ইন্টিমেটেড সার্ভে রিপোর্টে বীমা দাবীর পরিমান অনেক বেশি হয়। তিনি আরও বলেন- বছরের পর বছর বীমা দাবী বকেয়া থাকার কারণ হচ্ছে- বীমা দাবী নিষ্পত্তির জন্য কোম্পানীসমূহের কাংখিত সহযোগিতার অভাব। তারা সঠিকভাবে নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় দলিলাদি দাখিল করতে পারছে না। সার্ভে রিপোর্ট না পাওয়া আরেকটি বড় কারণ। সার্ভে রিপোর্ট দাখিল করার জন্য কোম্পানীসমূহকে বার বার তাগাদা দিতে হয়। এছাড়া বীমাকারী প্রতিষ্ঠান পুনঃবীমা প্রিমিয়াম সঠিক সময়ে পরিশোধ না করলে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পক্ষে বীমা দাবী পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। এসব কারণে বীমা দাবী নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয় বলে তিনি সভাকে অবহিত করেন। তবে তিনি সভাকে অবহিত করেন যে, পুনঃবীমা সংক্রান্ত বীমা দাবী নিষ্পত্তি সহজীকরণের জন্য সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে একটি গাইডলাইন চূড়ান্ত করার কাজ চলামন রয়েছে যা সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে সম্পন্ন হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নিবার্হী কর্মকর্তা জনাব সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বলেন– সাধারণ বীমা কর্পোরেশন অনেক ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করে বীমা দাবী নিষ্পত্তি না করে ফেরত প্রদান করছে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন যতক্ষণ পর্যন্ত না Acceptance দিচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ডেবিট নোটও পাঠাচ্ছেন না, ফলে কোম্পানী পুনঃবীমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে পারছে না।। তিনি আরও বলেন বীমা দাবী নিষ্পত্তির আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্ট। বীমা দাবী নিষ্পত্তিতে ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্ট বাধ্যতামূলক নয়। আগুন লাগার প্রমাণক হিসেবে কোম্পানীসমূহ ফায়ার ব্রিগ্রেড রিপোর্ট সংরক্ষণ করে থাকে। তিনি ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্টের দরকার নেই বলে সভায় বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়াও, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন নতুন নতুন বাড়তি অনেক কাগজপত্র চান যা প্রকারন্তরে অপ্রয়োজনীয় ও সময় সাপেক্ষ হয়ে দাড়ায় বলে তিনি দাবী করেন।

গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব সৈয়দ ফরহাদ আব্বাস হোসেন বলেন– বীমাকারী কোম্পানীসমূহ যেভাবে বীমা দাবী নিষ্পত্তি করছে সেটার লস এডজাস্টমেন্ট রিপোর্টটিকেই সাধারণ বীমা কর্পোরেশন প্রমাণক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। ফায়ার ব্রিগেড ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে কিনা সেটার একটা ফিজিক্যাল এভিডেন্স নিয়ে সেটাকেই সাধারণ বীমা কর্পোরেশন গ্রহণ করতে পারে। ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্ট সংগ্রহ

সংগ্রহ করা সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে। তিনি পুনঃবীমা দাবী পরিশোধ সহজ করার দাবী করেন সভায়।

এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ ইমাম শাহীন বলেন– বীমা দাবী নিষ্পত্তিতে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের বোর্ডের অতিরিক্ত দলিল-দস্তাবেজ এর চাহিদাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশন যে সকল কাগজপত্রের চাহিদা প্রদান করে যার সাথে বীমা দাবী নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনের কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ বিদেশী পুনঃবীমা কারীরা, যাদের সাথে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনও পুনঃবীমা করে থাকে, তারা শুধুমাত্র সার্ভে রিপোর্ট ও লস ইন্টিমেটেডের ভিত্তিতে পুনঃবীমা দাবীর অর্থ পরিশোধ করে থাকে। তিনি বাড়তি ও বীমা দাবী নিষ্পত্তিতে অপ্রয়োজনীয় তথ্যাদি চাওয়ায় কারণে বীমা দাবী নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে যা বীমা আইনের সাথে সাংঘার্ষিক বলে মনে করেন।

রুপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড উপদেষ্টা জনাব পি কে রায় বলেন– ফেকাল্টিটিভের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় ফেকাল্টিটিভ এর প্লেসমেন্ট সাধারণ বীমা কর্পোরেশন দিতে পারছে না কিংবা দিতে দিতে ১০/১৫ কিংবা এক মাস সময় লেগে যায়। এই সময়ের মধ্যে যদি ক্লেইম হয়ে যায় তবে তার দায় কার এ মর্মে প্রশ্ন উত্থাপন করেন সভায়। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন যদি প্রিমিয়াম পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দেয় এবং সেই সময়ের মধ্যে কোম্পানীগুলো প্রিমিয়াম পরিশোধ করে তাহলে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের বীমা দাবী পরিশোধ করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। পুনঃবীমা বীমা দাবী নিষ্পত্তির জন্য তিনি আলাদা একটি চেক লিস্ট তৈরীর অনুরোধ করেন যে চেক লিস্ট অনুয়ায়ী কোম্পানীগুলো দলিলাদি দাখিল করবেন।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব নাসিরউদ্দিন আহমেদ পাভেল বলেন– সাধারণ বীমা কর্পোরেশন পুন:বীমা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেভাবে বীমা দাবী নিষ্পত্তি করছে সেটা কোনো আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। তাই বীমা আইন সংশোধনে এই বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন কোম্পানীগুলোর সাথে পিএসবির অংশটাও তারা এডজাস্টমেন্ট করেন। তিনি পিএসবির এই অর্থ নগদ দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন যে সমস্ত কোম্পানীগুলোর নিকট পুনঃবীমা প্রিমিয়াম বকেয়া পাবে না সেসমস্ত কোম্পানীর বীমা দাবীও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন পরিশোধ করছে না মর্মে অভিযোগ উত্থাপন করেন। এই সমস্যার কারণ হিসেবে তিনি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালনা পর্ষদকে দায়ী করেন এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বীমা গ্রাহক সুরক্ষা গাইডলাইন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে মেনে চলার অনুরোধ জানান। আন্তজার্তিক রীতি হচ্ছে প্রিমিয়াম ও বীমা দাবী ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা। সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সাথে দেনা পাওনার হিসাব ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ খালেদ হোসেন বলেন– বীমা একটা চুক্তি সেই চুক্তি অনুযায়ী যেখানে যেভাবে বলা রয়েছে সেখানে সেভাবে মেনে চলা উচিত। তিনি আরও বলেন কান্ট্রি লিমিট সাধারণ বীমা কর্পোরেশন করে থাকে কিন্তু কান্ট্রি লিমিট সাধারণ বীমা কর্পোরেশন করতে পারে কিনা কিংবা পারলেও কতটুকু করতে পারবে সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। বিশেষকরে বৈদেশিক পুনঃবীমা, রিটেনশন ও ট্যারিফ নিয়ে পরবর্তীতে একটি সভার আয়োজন করার তিনি প্রস্তাব করেন।

বিআইএর প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন– সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ও কোম্পানীগুলোর মধ্যে দেনা পাওনার এই অচলায়তন অবস্থা খুব দ্রুতই নিরসন করা দরকার। প্রক্রিয়াটা যত সহজে করা যায় সে বিষয়ে সবাইকে ভাবা উচিত। এজন্য, তিনি আইডিআরএ, বিআইএ ও এসবিসির সমন্বয়ে একটি নীতিমালা তৈরীর অনুরোধ জানান।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন– মানুষ বীমা করছে ঝুঁকি নিরসনের জন্য। সে ঝুঁকি নিরসন হবে যদি বীমা দাবী সঠিক সময়ে সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা যায়। তিনি বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকটা বীমা দিবসে বীমা দাবী নিষ্পত্তির উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন সকল বীমা দাবী নিষ্পত্তিতে ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্ট শুধুমাত্র অগ্নি দুর্ঘটনার প্রমাণক হিসেবে প্রয়োজন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে অগ্নিকান্ডের ক্ষতি নির্ধারণের জন্য ফায়ার ব্রিগ্রেড রিপোর্টের প্রয়োজন