বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি বিদ্যমান থাকে যা বিনিয়োগকারীদের বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি। নিচে বাংলাদেশি উদাহরণ এবং কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান সহ বিনিয়োগের প্রধান ঝুঁকিসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. বাজার ঝুঁকি (Market Risk)
বর্ণনা: বাজারের সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগের মূল্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা।
উদাহরণ: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE) এর অনিশ্চিত বাজার পরিস্থিতি। যেমন, ২০২২ সালে কোরোনা মহামারীর প্রভাবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে প্রায় ৩০% পতন ঘটেছিল।
২. ক্রেডিট ঝুঁকি (Credit Risk)
বর্ণনা: ঋণগ্রহীতার দেনা পরিশোধে ব্যর্থতার সম্ভাবনা।
উদাহরণ: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ব্যাংকগুলোর নন-পারফর্মিং লোন (NPL) এর হার প্রায় ৩% ছিল, যা ঋণগ্রহীতার ডিফল্টের কারণে ক্ষতি হতে পারে।
৩. লিকুইডিটি ঝুঁকি (Liquidity Risk)
বর্ণনা: বিনিয়োগকে দ্রুত নগদে রূপান্তর করতে না পারার ঝুঁকি।
উদাহরণ: ছোট ও মাঝারি আকারের (SMEs) কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করলে প্রায়ই লিকুইডিটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, কারণ এই ধরনের কোম্পানিগুলোর শেয়ারগুলো সহজেই বিক্রি করা যায় না।
৪. মুদ্রা ঝুঁকি (Currency Risk)
বর্ণনা: বৈদেশিক মুদ্রার মূল্য পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগের মানের পরিবর্তন।
উদাহরণ: বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যখন টাকার বিনিময় করেন, তখন টাকার বিনিময় হার ওঠানামা তাদের বিনিয়োগের মানকে প্রভাবিত করতে পারে। ২০২৩ সালে টাকার অবমূল্যায়ন বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে প্রভাবিত করেছিল।
৫. সুদের হার ঝুঁকি (Interest Rate Risk)
বর্ণনা: সুদের হার বৃদ্ধির কারণে ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে।
উদাহরণ: বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালে সুদের হার বৃদ্ধি করে, যার ফলে ব্যবসাগুলোর ঋণের পরিমাণ বাড়ে এবং তাদের মুনাফা কমে যায়।
৬. রাজনৈতিক ঝুঁকি (Political Risk)
বর্ণনা: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বা পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
উদাহরণ: ২০২১ সালে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যায়, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দেয় এবং স্টক মার্কেটে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
৭. আইনগত ঝুঁকি (Legal Risk)
বর্ণনা: আইনগত পরিবর্তন বা বিধিনিষেধের কারণে বিনিয়োগের মান বা শর্তাবলী পরিবর্তিত হতে পারে।
উদাহরণ: বাংলাদেশের ই-কমার্স আইন ২০২২ প্রবর্তন করার সময় অনেক স্টার্টআপ কোম্পানি আইনগত অস্পষ্টতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
৮. অপারেশনাল ঝুঁকি (Operational Risk)
বর্ণনা: অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া, মানুষ বা সিস্টেমের ত্রুটির কারণে ক্ষতির সম্ভাবনা।
উদাহরণ: ২০২৩ সালে কিছু ব্যাংক সাইবার আক্রমণের কারণে তথ্য ফাঁস হয়, যা তাদের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমায়।
৯. সুনাম ঝুঁকি (Reputation Risk)
বর্ণনা: কোম্পানির খারাপ সুনামের কারণে বিনিয়োগের মূল্য হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি।
উদাহরণ: একটি বড় ব্যাংক যদি কোন দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তার শেয়ারের মূল্য দ্রুত কমে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে একটি বড় ব্যাংকের দুর্নীতি মামলার কারণে তার শেয়ারের মূল্য প্রায় ২০% হ্রাস পায়।
উপসংহার
বাংলাদেশে বিনিয়োগের সময় এই ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগকারীদের উচিত বাজারের অবস্থা, অর্থনৈতিক প্রবণতা, আইনগত পরিবর্তন এবং অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন থাকা এবং সেগুলো মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত কৌশল গ্রহণ করা। সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষতির সম্ভাবনা কমে।