ঝুঁকি প্রিমিয়াম কি?
ঝুঁকি প্রিমিয়াম (Risk Premium) হলো অতিরিক্ত মুনাফা যা বিনিয়োগকারীরা একটি ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে বিনিয়োগ করার বিনিময়ে প্রত্যাশা করে, তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিযুক্ত সম্পদের (যেমন সরকারি বন্ড) চেয়ে। সহজ কথায়, ঝুঁকি প্রিমিয়াম হল সেই অতিরিক্ত আয় যা বিনিয়োগকারীরা উচ্চ ঝুঁকির বিনিয়োগের জন্য লাভের প্রত্যাশা করেন।
বাংলাদেশের উদাহরণ এবং তথ্য
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ পরিবেশে ঝুঁকি প্রিমিয়ামের প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়। নিচে কিছু উদাহরণ এবং তথ্য উল্লেখ করা হলো:
১. বাংলাদেশ স্টক মার্কেট বনাম সরকারি বন্ড
- সরকারী বন্ড: বাংলাদেশের ১০ বছরের সরকারি বন্ডের সুদের হার প্রায় ৭-৮%। এগুলো তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিযুক্ত।
- স্টক মার্কেট: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এর স্টকের বার্ষিক গড় রিটার্ন প্রায় ১২-১৫% হতে পারে। এই অতিরিক্ত রিটার্নই ঝুঁকি প্রিমিয়াম হিসেবে বিবেচিত হয়। উদাহরণ: যদি সরকারি বন্ডের সুদের হার ৭% হয় এবং স্টকের গড় রিটার্ন ১৩% হয়, তাহলে ঝুঁকি প্রিমিয়াম হবে ৬% (১৩% – ৭%)।
২. মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান
- উচ্চ সুদের হার: বাংলাদেশে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন গ্রামীণ ব্যাংকিং বা মাইক্রো-লোন প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ সুদের হার প্রদান করে, সাধারণত ১৫-২০%।
- ঝুঁকি প্রিমিয়াম: এই উচ্চ সুদের হার মাইক্রোফাইন্যান্সে উচ্চ ডিফল্ট রেটের কারণে ঝুঁকি প্রিমিয়ামের প্রতিফলন। তথ্য: বাংলাদেশে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানের ডিফল্ট রেট সাধারণত ১-২% হলেও, উচ্চ সুদের হার বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি প্রিমিয়াম হিসেবে কাজ করে।
৩. বাণিজ্যিক প্রকল্পে বিনিয়োগ
- ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রকল্প: যেমন, নতুন পাওয়ার প্ল্যান্ট বা সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে বিনিয়োগ করার সময় বিনিয়োগকারীরা অতিরিক্ত ঝুঁকি প্রিমিয়াম বিবেচনা করেন কারণ প্রকল্পের সময়সীমা, অর্থায়ন, এবং লাভজনকতার অনিশ্চয়তা থাকতে পারে। উদাহরণ: একটি নতুন পাওয়ার প্ল্যান্টে বিনিয়োগের প্রত্যাশিত রিটার্ন ১২% হতে পারে, যেখানে সরকারি বন্ডের রিটার্ন ৭%। এখানে ঝুঁকি প্রিমিয়াম হবে ৫%।
৪. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও ঝুঁকি
- GDP বৃদ্ধি: বাংলাদেশের GDP বৃদ্ধির হার ২০২২ সালে প্রায় ৮.২% ছিল, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করেছে।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ: একই সময়ে, বন্যা বা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি প্রিমিয়াম বৃদ্ধি করে। তথ্য: ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজেক্টে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা বিবেচনা করে অতিরিক্ত ঝুঁকি প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মুনাফা প্রত্যাশাকে প্রভাবিত করেছে।
উপসংহার
ঝুঁকি প্রিমিয়াম বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগ করার সময় বিবেচনা করতে হয়। বাংলাদেশের উদাহরণে দেখা যায় যে, বিনিয়োগকারীরা সরকারি বন্ডের তুলনায় স্টক মার্কেট, মাইক্রোফাইন্যান্স, বা বাণিজ্যিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করার সময় অতিরিক্ত ঝুঁকি প্রিমিয়াম প্রত্যাশা করে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল।
উৎস:
- বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদন
- বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান
- মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন