তরলতা ঝুঁকি কি?
তরলতা ঝুঁকি (Liquidity Risk) হলো সেই সম্ভাবনা যা কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনীয় সময়ে তার সম্পদকে নগদে রূপান্তর করতে অসুবিধা হয়। অর্থাৎ, যখন কোনো ব্যবসা বা বিনিয়োগকারী তাড়াতাড়ি নগদ প্রয়োজন হয়, তখন তারা তার সম্পদকে দ্রুত এবং বিনা ক্ষতির বিক্রি করতে পারে কিনা, তা তরলতা ঝুঁকির মূল বিষয়।
তরলতা ঝুঁকির ধরন
তরলতা ঝুঁকি প্রধানত দুই ধরনের:
- অপারেটিং তরলতা ঝুঁকি: দৈনন্দিন কার্যক্রমে নগদ প্রবাহের অনিশ্চয়তা।
- বিনিয়োগ তরলতা ঝুঁকি: বিনিয়োগকৃত সম্পদকে দ্রুত নগদে রূপান্তর করার সময় অসুবিধা।
বাংলাদেশের উদাহরণ
বাংলাদেশে তরলতা ঝুঁকি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়। নিচে কিছু উদাহরণ এবং তথ্য তুলে ধরা হলো:
১. ব্যাংকিং খাত
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ-দেনা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৮%। যদিও ব্যাংকগুলি তরলতা রক্ষা করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে, কিন্তু উচ্চ ঋণের কারণে কিছু সময়ে তাদের তরলতা ঝুঁকি বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ব্যাংক যদি হঠাৎ করে গ্রাহকদের কাছ থেকে বড় পরিমাণে জমা প্রত্যাহার করতে হয়, তবে তা তাড়াতাড়ি নগদ সরবরাহে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
২. স্টক মার্কেট
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এ কিছু কোম্পানির শেয়ার দ্রুত বিক্রি না হলে বিনিয়োগকারীদের তরলতা ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। যেমন, ২০২২ সালে কিছু ইলেকট্রনিক কোম্পানি বাজারে তাদের শেয়ার দ্রুত বিক্রি করতে পারেনি, ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
৩. রিয়েল এস্টেট
বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে তরলতা ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। স্থায়ী সম্পদ যেমন বাড়ি বা মাটির দ্রুত বিক্রি সম্ভব না হওয়ায়, জরুরি নগদ প্রয়োজন হলে মালিকদের বড় অংকের ক্ষতি হতে পারে। ২০২৩ সালে রিয়েল এস্টেট বাজারে মন্দার কারণে অনেক মালিক তাদের সম্পদ বিক্রি করতে পারেনি, ফলে তারা নগদ সমস্যায় পড়েছিল।
তরলতা ঝুঁকি মোকাবেলার উপায়
বাংলাদেশে তরলতা ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
- বৈচিত্র্যপূর্ণ বিনিয়োগ: বিভিন্ন ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি ভাগ করা।
- নিয়মিত নগদ রিজার্ভ রাখা: জরুরি পরিস্থিতির জন্য পর্যাপ্ত নগদ সঞ্চয় রাখা।
- সঠিক পরিকল্পনা এবং বিশ্লেষণ: ব্যবসা বা বিনিয়োগের পূর্বে ভালোভাবে বাজার বিশ্লেষণ করা এবং নগদ প্রবাহের পরিকল্পনা তৈরি করা।
- লিকুইড সম্পদের বৃদ্ধি: সহজে বিক্রিযোগ্য সম্পদ যেমন শেয়ার, সরকারি বন্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগ বাড়ানো।
উপসংহার
তরলতা ঝুঁকি হলো কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা সঠিকভাবে পরিচালনা না করলে তা আর্থিক সমস্যার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে এই ঝুঁকি স্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি কমানো সম্ভব। তরলতা ঝুঁকি বুঝে এবং এর মোকাবেলায় সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়।