নন-লাইফ বীমাকারীর আর্থিক স্থিতিশীলতা: সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালা ২০২৪
বাংলাদেশে নন-লাইফ বীমা শিল্পের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি চালু হয়েছে সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালা ২০২৪। এই প্রবিধানমালা বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ ও দায়ের ভারসাম্য নির্ধারণে এবং তাদের ভবিষ্যৎ আর্থিক ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
সলভেন্সি মার্জিন: কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ
সলভেন্সি মার্জিন (Solvency Margin) হলো একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ (Assets) এবং দায়ের (Liabilities) মধ্যে ব্যবধান, যা তাদের আর্থিক সক্ষমতার নির্দেশক। এটি দেখায় যে কোনো প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতের দাবী পূরণের জন্য কতটা আর্থিকভাবে প্রস্তুত।
উদাহরণ: একটি প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদ যদি হয় ৫০ কোটি টাকা এবং দায় থাকে ৩০ কোটি টাকা, তবে তাদের সলভেন্সি মার্জিন হবে: সলভেন্সি মার্জিন = মোট সম্পদ – মোট দায় = ৫০ – ৩০ = ২০ কোটি টাকা।
প্রবিধান অনুযায়ী, প্রতিটি বীমা প্রতিষ্ঠানের একটি ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সলভেন্সি মার্জিন (RSM) বজায় রাখতে হবে। এটি প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মানদণ্ড।
প্রবিধানমালা অনুযায়ী হিসাব পদ্ধতি
সলভেন্সি মার্জিন নির্ধারণের জন্য তিনটি ধাপ রয়েছে:
- সম্পদের মূল্যায়ন (Value of Assets – VA):
সম্পদ বলতে বোঝানো হয় নগদ অর্থ, বিনিয়োগ, স্থাবর সম্পত্তি, এবং বকেয়া প্রিমিয়াম। - দায়ের মূল্যায়ন (Value of Liabilities – VL):
দায়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বকেয়া দাবী, অপ্রাপ্ত প্রিমিয়াম এবং অন্যান্য আর্থিক দায়িত্ব। - সলভেন্সি মার্জিন নির্ধারণ (SM):
সলভেন্সি মার্জিন (SM) নির্ণয়ের ফর্মুলা:
SM = মোট সম্পদ (VA) – মোট দায় (VL)।
হিসাবের উদাহরণ
একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়:
- মোট সম্পদ (VA): ৫০ কোটি টাকা
- মোট দায় (VL): ৩০ কোটি টাকা
- প্রয়োজনীয় সলভেন্সি মার্জিন (RSM): ৫ কোটি টাকা
সলভেন্সি মার্জিন (SM):
SM = ৫০ – ৩০ = ২০ কোটি টাকা।
এই উদাহরণে, কোম্পানির সলভেন্সি মার্জিন (২০ কোটি টাকা) প্রয়োজনীয় সলভেন্সি মার্জিনের (৫ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি। এটি প্রমাণ করে যে কোম্পানিটি আর্থিকভাবে স্থিতিশীল।
মূল টার্মিনোলজির ব্যাখ্যা
- সম্পদ (Assets):
কোম্পানির হাতে থাকা নগদ অর্থ, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য সম্পত্তি যা ভবিষ্যতে আয় আনতে পারে। - দায় (Liabilities):
কোম্পানির আর্থিক দায়িত্ব যেমন বীমা দাবী, লোন, বা অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি। - প্রয়োজনীয় সলভেন্সি মার্জিন (RSM):
বীমা প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ন্যূনতম মূলধন। - সলভেন্সি মার্জিন (SM):
সম্পদ ও দায়ের মধ্যে ব্যবধান, যা কোম্পানির অতিরিক্ত আর্থিক সক্ষমতা নির্দেশ করে।
প্রবিধানমালার গুরুত্ব
সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালা ২০২৪ বীমা শিল্পে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। এটি নিশ্চিত করে যে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো:
- দাবি পরিশোধে সক্ষম, এমনকি সংকটময় পরিস্থিতিতেও।
- পলিসিহোল্ডারদের আস্থা বজায় রাখতে আর্থিকভাবে স্থিতিশীল।
অর্থাৎ, এই প্রবিধানমালা বীমা শিল্পকে আরও স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ করবে। এটি পলিসি গ্রাহকদের দাবি মেটানো এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
লেখক:
বাংলাদেশ বীমা সংক্রান্ত প্রতিবেদক