বাংলাদেশের বীমা খাতে সরকারি উদ্যোগের দুই প্রতিষ্ঠান, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন (এসবিসি) এবং জীবন বীমা কর্পোরেশন (জেবিসি), দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সালে “বীমা কর্পোরেশন আইন, ২০১৯” প্রণয়ন করে। এই আইনটি পূর্ববর্তী ১৯৭৩ সালের আইনকে প্রতিস্থাপন করে এবং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বীমা খাতের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো প্রদান করে।
আইনের মূল বিষয়বস্তু:
-
সংস্থা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা: আইনটি এসবিসি এবং জেবিসি’র প্রতিষ্ঠা, মূলধন, পরিচালনা পর্ষদ গঠন, কার্যকরী ক্ষমতা এবং দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করে। এছাড়াও, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের যোগ্যতা, নিয়োগ প্রক্রিয়া, মেয়াদ এবং অপসারণের বিষয়গুলোও এই আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
-
আর্থিক ব্যবস্থাপনা: আইনটি বীমা কর্পোরেশনগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ, ঋণ গ্রহণ, হিসাবরক্ষণ এবং নিরীক্ষা সম্পর্কিত বিধানগুলোকে সুসংহত করেছে। এটি সরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
-
নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি: আইনটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছে। আইডিআরএ এসবিসি এবং জেবিসি’র কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, নিরীক্ষা, তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে বীমা খাতের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করতে পারে।
-
অপরাধ ও শাস্তি: আইনটি বীমা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, প্রতারণা, অর্থপাচার এবং অন্যান্য অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান করেছে। এটি বীমা খাতে স্বচ্ছতা এবং সততা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
আইনের প্রভাব ও গুরুত্ব:
বীমা কর্পোরেশন আইন, ২০১৯ বাংলাদেশের বীমা খাতের আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি সরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুশাসন, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এই আইনের ফলে এসবিসি এবং জেবিসি গ্রাহকদের জন্য আরও উন্নত সেবা প্রদান, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত হবে।
এই আইনটি বাংলাদেশের বীমা খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়।