রিস্ক বেইসড সুপারভিশন ফ্রেমওয়ার্ক

Risks based supervision
Spread the love

ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো: বাংলাদেশের বিমা কোম্পানীর জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি

বাংলাদেশের বিমা খাতের সুস্থতা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অতীব জরুরী। এই লক্ষ্যে ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো (Risk-Based Supervisory Framework) একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো কী?

ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো হলো এমন একটি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যেখানে বিমাকampaniগুলোর ঝুঁকি প্রোফাইলের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রতিটি বিমাকampaniর আর্থিক সামর্থ্য, পরিচালন ব্যবস্থা, পুনর্বিমা নীতি, বিনিয়োগ কৌশল এবং দায় নির্বাহের ক্ষমতা 등 বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে তাদের ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এই ঝুঁকির মাত্রার ওপরে ভিত্তি করে নিয়ন্ত্রকর্তা সংস্থা (যেমন, বাংলাদেশ বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ प्राधिकरण – আইডিআরএ) তত্ত্বাবধানের ক شدت (intensity) নির্ধারণ করে।

ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামোর সুবিধা:

  • কার্যকর তত্ত্বাবধান: ঝুঁকিপূর্ণ বিমাকampaniগুলোর ওপর বেশি তত্ত্বাবধান আরোপ করা হয়, ফলে খাতের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।
  • দক্ষতা বৃद्धि: কম ঝুঁকিপূর্ণ বিমাকampaniগুলোর ক্ষেত্রে কম তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হয়, ফলে নিয়ন্ত্রকর্তা সংস্থার সম্পদ দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা যায়।
  • বিমাকampaniর লাভ: কম তত্ত্বাবধানের ফলে বিমাকampaniগুলো কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে নিয়ন্ত্রকরণ মেনে চলতে পারে।

ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামোর কার্যকরী উদাহরণ:

  • মূলধন যথার্থতা (Capital Adequacy): একটি বিমাকampaniর মোট মূলধন তার দায়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, সেটা বিশ্লেষণ করা হয়। উচ্চ মূলধন থাকলে ঝুঁকি কম বলে বিবেচনা করা হয়।
  • কার্যকরী পরিচালনা (Governance): বিমাকampaniর পরিচালনা পর্ষদের দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি, এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল মূল্যায়ন করা হয়।
  • পুনর্বিমা (Reinsurance): ঝুঁকি কমাতে বিমাকampani অন্য কোম্পানির কাছে যে পুনর্বিমা ক্রয় করে, তার পরিমাণ ও ধরণ বিশ্লেষণ করা হয়।

 

 

বাংলাদেশের বিমা বাজার এবং ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো:

বাংলাদেশের বিমা বাজার:

বাংলাদেশের বিমা বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এখনো এটি উন্নয়নশীল পর্যায়ে রয়েছে। বাজারে মোট ১০১টি বিমাকampani কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যার মধ্যে ৫২টি জীবন বিমা, ৪৫টি সাধারণ বিমা এবং ৪টি পুনর্বিমাampani রয়েছে। মোট বীমা প্রিমিয়াম আয় ২০১৯-২০ সালে ছিল ৩০,০০০ কোটি টাকারও বেশি।

ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা:

বাংলাদেশের বিমা বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি বিদ্যমান, যেমন:

  • আর্থিক ঝুঁকি: বিমাকampaniগুলোর আর্থিক অবস্থা দুর্বল হলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • বীমা ঝুঁকি: বীমা দাবি বৃদ্ধি পেলে বিমাকampaniগুলোর ক্ষতি হতে পারে।
  • বাজার ঝুঁকি: বাজারে অস্থিরতা বিমাকampaniগুলোর আয় ও লাভের ঝুঁকি তৈরি করে।
  • পরিচালন ঝুঁকি: অদক্ষ পরিচালনার ফলে বিমাকampaniগুলো ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো এই সকল ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

বাংলাদেশে ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামোর বর্তমান অবস্থা:

বাংলাদেশে ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো বাস্তবায়নের কাজ ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে। আইডিআরএ ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান নীতিমালা (Risk-Based Supervisory Framework Policy) প্রণয়ন করেছে এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে।

ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ:

  • দক্ষ জনবলের অভাব: ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ জনবলের প্রয়োজন।
  • তথ্যের অভাব: বিমাকampaniগুলো ঝুঁকি সম্পর্কিত তথ্য সঠিকভাবে প্রদানে দুর্বল।
  • প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর অভাব: ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য আধুনিক প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর প্রয়োজন।

সুপারিশ:

  • দক্ষ জনবল তৈরি: ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করা।
  • তথ্য প্রদান ব্যবস্থা উন্নত করা: বিমাকampaniগুলো ঝুঁকি সম্পর্কিত তথ্য সঠিকভাবে প্রদানে উৎসাহিত করা।
  • প্রযুক্তিগত অবকাঠামো উন্নত করা: ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো বাস্তব

বাংলাদেশে ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামোর সম্ভাবনীয় সুফল:

  • বিমা খাতের স্থিতিশীলতা বৃद्धि: ঝুঁকি কমানোর ফলে বাংলাদেশের বিমা খাতের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বাড়বে। এটি বিনিয়োজকারদের আস্থা জাগিয়ে তোলে এবং বিমা খাতের আরও বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
  • বিমাকampaniর দক্ষতা বৃद्धि: ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে বিমাকampaniগুলো তাদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল আরও দক্ষ করে তুলতে পারবে। ফলে, দীর্ঘমেয়াদে লাভের সম্भावনা বাড়বে।
  • নিয়ন্ত্রকর্তা সংস্থার কার্যকারিতা বৃद्धि: ঝুঁকি কম ঝুঁকিপূর্ণ বিমাকampaniগুলোর ক্ষেত্রে কম তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হলে, নিয়ন্ত্রকর্তা সংস্থা (আইডিআরএ) তাদের সম্পদ আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে।

আগামী পথচলা:

বাংলাদেশের বিমা খাতের সুস্থ বিকাশের জন্য ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে দক্ষ জনবল তৈরি, তথ্য প্রদান ব্যবস্থা উন্নতকরণ এবং প্রযুক্তিগত অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে এই কাঠামো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরী। ফলে, বাংলাদেশের বিমা খাত আরও স্থিতিশীল ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামোতে হিসাবের উদাহরণ (বিমাকampani)

ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান কাঠামো (আরবিএস) এর জন্য নির্দিষ্ট কোন হিসাব পদ্ধতি হয়তো গোপনীয়তার কারণে প্রকাশ করা নাও হতে পারে। তবে, বিমাকampaniর ক্ষেত্রে আরবিএস কাঠামোতে কীভাবে হিসাব জড়িত থাকতে পারে, সে সম্পর্কে নিচে দেওয়া হলো:

ঝুঁকি গুরুত্ব (Risk Weightings):

  • বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়কে সংখ্যাসূচক (ওজন) দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। এই বিষয়গুলোর মধ্যে থাকতে পারে:
    • আর্থিক ঝুঁকি: মূলধন যথার্থতা অনুপাত (Capital adequacy ratio), দ্রাব্যতা লাভের অনুপাত (Solvency margin ratio), ক্ষতির রিজার্ভ যথার্থতা অনুপাত (Loss reserve adequacy ratio)। (নিম্ন অনুপাতের জন্য উচ্চ ওজন – অর্থকল্যাণ দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত)
    • বীমা গ্রহণ ঝুঁকি (Underwriting Risk): বিভিন্ন ধরনের বিমার ক্ষেত্রে ক্ষতির অনুপাত (Loss ratio), ব্যয় অনুপাত (Expense ratio), ঝুঁকি-সামঞ্জস্যপ্রাপ্ত প্রিমিয়াম অনুপাত (Risk-adjusted premium ratio)। (উচ্চ ওজনের অর্থ বীমা গ্রহণে বেশি চ্যালেঞ্জ আছে)
    • পুনর্বিমা ঝুঁকি (Reinsurance Risk): পুনর্বিমা নির্ভরতা অনুপাত (Reinsurance dependence ratio), পুনর্বিমাকারীদের মান (Quality of reinsurers)। (পুনর্বিমার ওপর বেশি নির্ভরতা বা নিম্নমানের পুনর্বিমাকারীদের জন্য উচ্চ ওজন)
    • পরিচালনা ঝুঁকি (Governance Risk): পরিচালনা পর্ষদের গঠন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যকারিতা। (দৃঢ় পরিচালনা পদ্ধতির জন্য নিম্ন ওজন)

স্কোরিং পদ্ধতি (Scoring System):

  • প্রতিটি বিমাকampani তাদের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলির ওজন দেওয়া যোগফলের ভিত্তিতে একটি স্কোর পায়। ওজন প্রতিটি বিষয়ের তুলনামূলক গুরুত্ব প্রতিফলিত করে।

উদাহরণ (সাধারণীকৃত):

  • আর্থিক ঝুঁকি (ওজন: 0.4): মূলধন যথার্থতা অনুপাত = ১.৫ (ভালো) = 0.4 পয়েন্ট
  • বীমা গ্রহণ ঝুঁকি (ওজন: 0.3): সম্মিলিত অনুপাত (ক্ষতি + ব্যয়) = ১০৫% (গড়ের উপরে) = 0.15 পয়েন্ট
  • পুনর্বিমা ঝুঁকি (ওজন: 0.2): পুনর্বিমা নির্ভরতা = ৭০% (উচ্চ) = 0.14 পয়েন্ট
  • পরিচালনা ঝুঁকি (ওজন: 0.1): শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রম = 0.1 পয়েন্ট (긍াত্মক বিষয়)

মোট স্কোর:

মোট স্কোর: 0.59

ব্যাখ্যা:

  • এই উদাহরণে, বিমাকampaniটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে মোটামুটি ভালো পারফরম্যান্স করেছে।
  • আর্থিক ঝুঁকি এবং পরিচালনা ঝুঁকি ক্ষেত্রে ভালো স্কোর (0.4 এবং 0.1) ইঙ্গিত করে যে বিমাকampaniটির আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী এবং দক্ষ পরিচালনা ব্যবস্থা রয়েছে।
  • বীমা গ্রহণ ঝুঁকি এবং পুনর্বিমা ঝুঁকি ক্ষেত্রে কিছুটা উচ্চ স্কোর (0.15 এবং 0.14) ইঙ্গিত করে যে বিমাকampaniটি কিছু ঝুঁকির মুখোমুখি, যেমন বীমা দাবি বৃদ্ধি এবং পুনর্বিমা নির্ভরতা।

সুপারিশ:

  • বিমাকampaniটি উচিত বীমা গ্রহণ ঝুঁকি এবং পুনর্বিমা ঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া।
  • বীমা গ্রহণ ঝুঁকি কমানোর জন্য, বিমাকampaniটি কঠোর ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারে এবং ঝুঁকিপূর্ণ বীমা গ্রহণ এড়াতে পারে।
  • পুনর্বিমা ঝুঁকি কমানোর জন্য, বিমাকampaniটি উচ্চমানের পুনর্বিমাকারীদের সাথে চুক্তি করতে পারে এবং পুনর্বিমা নির্ভরতা কমাতে পারে।

এই স্কোরটি বিমাকampaniর জন্য শুধুমাত্র একটি নির্দেশিকা। নিয়ন্ত্রকর্তা (আইডিআরএ) বিমাকampaniর সামগ্রিক ঝুঁকি প্রোফাইল মূল্যায়ন করার জন্য আরও অনেক বিষয় বিবেচনা করবে।

Disclaimer:

  • এই উদাহরণটি কেবলমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
  • কোন নির্দিষ্ট বিমাকampaniর ঝুঁকি মূল্যায়ন করার জন্য এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *