আর্থিক ঝুঁকি ও ব্যবসায় ঝুঁকির পার্থক্য কি?
আর্থিক ঝুঁকি এবং ব্যবসায় ঝুঁকি হলো দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যদিও এগুলো প্রায়ই একে অপরের সাথে মিলিয়ে নেওয়া হয়, তবে এদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নিচে এই দুটির মধ্যে পার্থক্য বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।
আর্থিক ঝুঁকি (Financial Risk):
সংজ্ঞা: আর্থিক ঝুঁকি হলো এমন ঝুঁকি যা একটি প্রতিষ্ঠান তার আর্থিক কাঠামো, সম্পদ, বা বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্মুখীন হয়। এটি মূলত আর্থিক বাজারের পরিবর্তন, সুদের হার, মুদ্রা বিনিময় হার, বা ঋণগ্রহীতার ডিফল্টের কারণে উদ্ভূত হতে পারে।
উদাহরণ:
- মুদ্রা ঝুঁকি (Currency Risk): বিদেশি মুদ্রায় বিনিয়োগ করলে মুদ্রার মূল্য পরিবর্তনের কারণে ক্ষতি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি বাংলাদেশি কোম্পানি আমেরিকান ডলারে ঋণ গ্রহণ করে এবং পরে ডলারের মূল্য বাড়ে, তাহলে ঋণ পরিশোধে অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে।
- সুদের হার ঝুঁকি (Interest Rate Risk): বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাড়ালে, প্রতিষ্ঠানের ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যা লাভের হার কমিয়ে দিতে পারে।
ব্যবসায় ঝুঁকি (Business Risk):
সংজ্ঞা: ব্যবসায় ঝুঁকি হলো এমন ঝুঁকি যা একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বা বহিঃস্থ কারণে তার কার্যক্রম, লাভজনকতা, বা স্থায়িত্বকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি বাজারের প্রতিযোগিতা, উৎপাদন সমস্যা, পরিচালন দক্ষতা, বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
উদাহরণ:
- প্রতিযোগিতার ঝুঁকি (Competitive Risk): নতুন প্রতিযোগী বাজারে এলে প্রতিষ্ঠানের বাজার শেয়ার কমে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের মোবাইল বাজারে নতুন ব্র্যান্ডের আগমন গ্রামীণফোনের বাজার শেয়ার কমাতে পারে।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ (Natural Disasters): বন্যা বা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবসার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ২০২৩ সালে সাইক্লোন ‘মোরান’ বাংলাদেশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করেছিল।
পার্থক্য:
- কেন্দ্রীভূত ক্ষেত্র:
- আর্থিক ঝুঁকি: মূলত আর্থিক বাজার ও আর্থিক কাঠামোর সাথে সম্পর্কিত।
- ব্যবসায় ঝুঁকি: প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কার্যক্রম ও বাজার পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত।
- কারণ:
- আর্থিক ঝুঁকি: সুদের হার, মুদ্রা বিনিময় হার, ঋণগ্রহীতার ডিফল্ট।
- ব্যবসায় ঝুঁকি: প্রতিযোগিতা, উৎপাদন সমস্যা, পরিচালন দক্ষতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
- পরিমাপযোগ্যতা:
- আর্থিক ঝুঁকি: পরিসংখ্যানগতভাবে পরিমাপ করা যায়, যেমন স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন, ভেরিয়েন্স।
- ব্যবসায় ঝুঁকি: পরিমাপ করা তুলনামূলকভাবে কঠিন, কারণ এটি অনেক অপ্রত্যাশিত ও বহুমাত্রিক।
উপসংহার:
আর্থিক ঝুঁকি এবং ব্যবসায় ঝুঁকি দুটি আলাদা হলেও পরস্পর সম্পর্কিত। একটি প্রতিষ্ঠানের স্থায়িত্ব ও সফলতার জন্য উভয় ধরনের ঝুঁকিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত ও পরিচালনা করা অপরিহার্য। বাংলাদেশী উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায় যে, আর্থিক ও ব্যবসায়িক ঝুঁকির সঠিক মূল্যায়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।