নৈতিক ঝুঁকি কি?
নৈতিক ঝুঁকি (Moral Hazard) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিমা গ্রহণের পরে তাদের আচরণ পরিবর্তন করে, যার ফলে ঝুঁকি বাড়ে এবং বিমা কোম্পানির ক্ষতি হয়। সহজ কথায়, যখন কেউ জানে যে তারা বিমার আওতায় থাকবে, তখন তারা ঝুঁকিপূর্ণ বা উদাসীন আচরণ করতে পারে, যা আগে হয়নি।
নৈতিক ঝুঁকির উদাহরণ:
১. বিমা ক্ষেত্রে নৈতিক ঝুঁকি:
বাংলাদেশে বীমা গ্রহণকারীরা যদি জানেন যে তাদের সম্পদ বিমা করা আছে, তাহলে তারা কম সতর্ক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গাড়ি বিমা করানো হলে, গাড়ির মালিক হয়তো কম সতর্কতা অবলম্বন করে গাড়ি চালাতে পারে, যা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ায়।
২. ব্যাংকিং ক্ষেত্রে নৈতিক ঝুঁকি:
ব্যাংকগুলো যদি জানে যে তারা সরকারের সমর্থন পাবে, তখন তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ দিতে পারে। বাংলাদেশে কিছু ব্যাংক উচ্চ সুদের হার দিয়ে ঋণ প্রদান করেছে, যা পরে ডিফল্টের কারণ হয়েছে এবং ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে।
৩. স্টক মার্কেটে নৈতিক ঝুঁকি:
বিনিয়োগকারীরা যদি জানেন যে তারা সরকারের তরফ থেকে সুরক্ষিত আছে, তাহলে তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ স্টকে বিনিয়োগ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু বিনিয়োগকারী DSE-তে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্টকে বিনিয়োগ করে বড় মুনাফার আশায়, যা বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
নৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয়:
১. সঠিক নীতি ও শর্তাবলী নির্ধারণ:
বীমা কোম্পানিগুলোকে তাদের নীতি ও শর্তাবলী স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে বিমার আওতায় আসা আচরণগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়।
২. অনুপ্রেরণা ব্যবস্থা:
বীমা গ্রহণকারীদের উৎসাহিত করা উচিত যেন তারা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ কম করে। উদাহরণস্বরূপ, নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করার জন্য ডিসকাউন্ট দেওয়া যেতে পারে।
৩. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন:
ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত, যাতে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
৪. শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি:
ব্যবহারকারীদের মধ্যে নৈতিক ঝুঁকির সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। তারা যেন বুঝতে পারে যে অতিরিক্ত ঝুঁকি তাদের নিজের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
উপসংহার:
নৈতিক ঝুঁকি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা বীমা, ব্যাংকিং, এবং স্টক মার্কেটের মতো খাতে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। বাংলাদেশে এই ঝুঁকির সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ক্ষতি কমাতে পারে এবং বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে। শিক্ষার্থীদের জন্য নৈতিক ঝুঁকির প্রভাব ও মোকাবেলার উপায় জানা তাদের ভবিষ্যতের আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।