সামাজিক ঝুঁকি কি?
সামাজিক ঝুঁকি (Social Risk) হলো এমন ধরনের ঝুঁকি যা সমাজের কাঠামো, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি বিভিন্ন সামাজিক পরিবর্তন যেমন জনসংখ্যার বৃদ্ধি, শিক্ষার হ্রাস, অপরাধের বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য সমস্যা, বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। সামাজিক ঝুঁকি বীমা এবং স্টক মার্কেটের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বিনিয়োগের স্থায়িত্ব এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে।
সামাজিক ঝুঁকের উদাহরণ:
১. জনসংখ্যার পরিবর্তন:
বাংলাদেশে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি শহুরে এলাকার সম্পত্তির মূল্য হ্রাস এবং নাগরিক সেবার চাপ বাড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার মতো বড় শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাসস্থান এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যা রিয়েল এস্টেট বাজারে ঝুঁকি তৈরি করে।
২. অপরাধ এবং নিরাপত্তা:
অপরাধের বৃদ্ধি ব্যবসায়িক পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে। ২০২৩ সালে ঢাকা শহরে অপরাধের সংখ্যা ১০% বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে এবং বীমা খাতে প্রিমিয়ামের হার বাড়িয়েছে।
৩. স্বাস্থ্য সংকট:
পানিজাত রোগ বা মহামারীর মতো স্বাস্থ্য সংকট ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। করোনাভাইরাস মহামারী বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল, যা অনেক ব্যবসার জন্য আর্থিক ক্ষতি এবং বীমা দাবি বৃদ্ধির কারণ হয়েছিল।
৪. পরিবেশগত পরিবর্তন:
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, সাইক্লোন, বা ভূমিধসের ঘটনা বাংলাদেশের মত দেশে সাধারণ, যা কৃষি, শিল্প এবং অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করে। ২০২৩ সালে সাইক্লোন ‘মোরান’ বহু ব্যবসা এবং বীমা প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করেছিল।
সামাজিক ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয়:
১. সচেতনতা বৃদ্ধি: সমাজের বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করে ঝুঁকি সম্পর্কে জানানো।
২. নীতিমালা ও আইন: শক্তিশালী নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করে সামাজিক ঝুঁকি কমানো।
৩. বীমা পণ্য উন্নয়ন: সামাজিক ঝুঁকিকে বিবেচনায় রেখে বীমা পণ্য তৈরি করা।
৪. সমাজিক গবেষণা: সমাজের পরিবর্তনশীল প্রবণতা বিশ্লেষণ করে ঝুঁকি পূর্বাভাস দেওয়া।
উপসংহার:
সামাজিক ঝুঁকি একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক সমস্যা যা ব্যবসা ও বিনিয়োগের স্থায়িত্বকে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলাদেশের উদাহরণগুলো দেখায় যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরাধ, স্বাস্থ্য সংকট এবং পরিবেশগত পরিবর্তন ব্যবসায়িক ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সঠিক নীতি, সচেতনতা এবং প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই ঝুঁকিগুলো কমানো সম্ভব, যা বীমা এবং স্টক মার্কেটের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।