ব্যবসায়িক ঝুঁকি কি? কত প্রকার?
ব্যবসায়িক ঝুঁকি বলতে এমন সম্ভাব্য ঘটনা বা অবস্থাকে বোঝায় যা একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, লাভ বা টেকসইতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই ঝুঁকিগুলি সঠিকভাবে চিহ্নিত ও ব্যবস্থাপনা না করলে ব্যবসার স্থায়িত্ব ও বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক ঝুঁকি বিদ্যমান, যা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
ব্যবসায়িক ঝুঁকের প্রকারভেদ:
১. বিনিয়োগ ঝুঁকি (Investment Risk):
- উদাহরণ: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (DSE) বিনিয়োগ করলে বাজারের ওঠানামার কারণে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ২০২২ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক কিছু সময়ে ১৫% হ্রাস পেয়েছিল, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছিল।
২. ক্রেডিট ঝুঁকি (Credit Risk):
- উদাহরণ: মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে, ঋণগ্রহীতাদের ডিফল্ট হওয়ার সম্ভাবনা ক্রেডিট ঝুঁকি সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ডিফল্ট রেট নিয়মিতভাবে মনিটর করা হয়।
৩. বাজার ঝুঁকি (Market Risk):
- উদাহরণ: মূল্যবৃদ্ধি বা মুদ্রাস্ফীতি ব্যবসার খরচ বাড়াতে পারে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি হার ৬.৮% ছিল, যা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি করে ব্যবসায়িক মুনাফা হ্রাস করেছে।
৪. অপারেশনাল ঝুঁকি (Operational Risk):
- উদাহরণ: প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা বা মানবিক ভুল অপারেশনাল ঝুঁকি সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যাংকের সিস্টেম ডাউন হলে গ্রাহক সেবা ব্যাহত হতে পারে।
৫. প্রাকৃতিক ঝুঁকি (Natural Risk):
- উদাহরণ: বন্যা বা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবসার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ২০২৩ সালে সাইক্লোন ‘মোরান’ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি এনেছিল।
৬. আইনগত ঝুঁকি (Legal Risk):
- উদাহরণ: নতুন আইন বা বিধি-নিষেধ ব্যবসার কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, পরিবেশ সংক্রান্ত নতুন নিয়মাবলী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হতে পারে।
উপসংহার:
ব্যবসায়িক ঝুঁকি সনাক্ত এবং কার্যকরীভাবে পরিচালনা করা একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশের উদাহরণ দেখায় যে, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং বাজারের অনিশ্চয়তা ব্যবসায়িক ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে।