বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে প্রধানত তার ভূগোলগত অবস্থান এবং টেকটোনিক প্লেটের মুভমেন্টের কারণে। নিচে এই ঝুঁকের কারণগুলি সংক্ষেপে উদাহরণ, তথ্য এবং পরিসংখ্যানসহ ব্যাখ্যা করা হলো:
১. ভূগোলগত অবস্থান এবং টেকটোনিক প্লেটের মুভমেন্ট
বাংলাদেশ উত্তর-পূর্বে ভারতে অবস্থিত এবং এটি ইন্ডিয়ান প্লেটের উপরে অবস্থিত। ইন্ডিয়ান প্লেট দক্ষিণ-পূর্বে মুভ করে এবং এটি ইউরেশিয়ান প্লেটের সাথে সংঘর্ষস্থলে রয়েছে, যা পর্বতশ্রেণী গঠন ও ভূমিকম্প সৃষ্টি করে। এছাড়াও, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে বার্মিজ প্লেট রয়েছে, যা ইন্ডিয়ান প্লেটের সাথে সাপেক্ষে রয়েছে। এই প্লেটের মুভমেন্টের ফলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণ: ইন্ডিয়ান প্লেটের ইউরেশিয়ান প্লেটের সাথে সংঘর্ষের ফলে হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছে এবং এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়ে।
২. ইতিহাসে ভূমিকম্পের ঘটনা
বাংলাদেশে অতীতে কিছু গুরুতর ভূমিকম্প হয়েছে যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব ফেলেছে:
- ১৯৬১ সালের ভূমিকম্প: ১৯৬১ সালের মার্চ মাসে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি মেগনিটিউড ৬.৯ ভূমিকম্প হয়েছিল, যা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়েছে।
- ২০০৭ সালের ভূমিকম্প: ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি ভূমিকম্প ঘটেছে, যার ফলে কিছু ক্ষতি হয়েছিল।
৩. ভূমিকম্প ঝুঁকির মানচিত্র এবং পরিসংখ্যান
বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকির মানচিত্র অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চল ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ঝুঁকি বেশি রয়েছে। ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর কিছু সংখ্যক ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে, যদিও বেশিরভাগই মৃদু তীব্রতার হয়।
- মেগনিটিউড: বাংলাদেশে ভূমিকম্পের মেগনিটিউড সাধারণত ৫ থেকে ৭ এর মধ্যে হয়।
- ভূমিকম্পের ঘনত্ব: প্রতিবছর প্রায় ২০-৩০টি ভূমিকম্পের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়, যার মধ্যে বেশিরভাগই ক্ষুদ্র তীব্রতার।
৪. অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং জনসংখ্যা ঘনত্ব
বাংলাদেশের উচ্চ জনসংখ্যা ঘনত্ব এবং অপর্যাপ্তভাবে নির্মিত বিল্ডিংগুলি ভূমিকম্পের সময় বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। অধিকাংশ স্থাপনা ভূমিকম্প প্রতিরোধী নয়, যা ঝুঁকি বাড়ায়।
উদাহরণ: ঢাকার মতো বড় শহরগুলিতে অধিক জনসংখ্যা থাকার কারণে, ভূমিকম্পের সময় বড় ধরনের ভাঙন-ফোড়ন ও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
৫. মাটি ও ভূগর্ভস্থ জলস্তরের প্রভাব
বাংলাদেশের মাটি প্রধানত পঙ্গলা এবং দালালি মাটির, যা ভূমিকম্পের সময় সিডনি-পেনা (liquefaction) সৃষ্টি করতে পারে। সিডনি-পেনা ঘটলে মাটির শক্তি হ্রাস পায় এবং স্থাপনা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।
উদাহরণ: মাটির সিডনি-পেনা ঘটলে ভবনগুলি স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে হঠাৎ ভেঙে পড়তে পারে, যা মানুষের জীবন ও সম্পত্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
উপসংহার
বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি তার টেকটোনিক প্লেটের অবস্থান, ইতিহাসে ভূমিকম্পের ঘটনা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং মাটির প্রকারের কারণে বিদ্যমান। এই ঝুঁকি কমাতে সঠিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ, ভূমিকম্প প্রতিরোধী নির্মাণ কৌশল গ্রহণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
- বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সেবা কেন্দ্র (BGS)
- ইউএস জিওলজিক সার্ভিস (USGS) ভূমিকম্প ডেটাবেজ
- বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক গবেষণা প্রবন্ধ