আর্থিক ঝুঁকি বলতে এমন কোন সম্ভাব্য পরিস্থিতিকে বোঝায় যা আর্থিক ক্ষতি বা ক্ষয়প্রাপ্তির সম্ভাবনা তৈরি করে। এটি ব্যবসা, বিনিয়োগ, এবং ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় বিবেচনা করতে হয়। আর্থিক ঝুঁকির সঠিক মূল্যায়ন ও ব্যবস্থাপনা ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সফলতার জন্য অপরিহার্য।
আর্থিক ঝুঁকের প্রধান ধরনসমূহ:
১. বাজার ঝুঁকি (Market Risk):
- মূল্য ঝুঁকি (Price Risk): বাজারের পরিবর্তনের ফলে সম্পদ বা পণ্যের মূল্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা।
- সুদের হার ঝুঁকি (Interest Rate Risk): সুদের হার বৃদ্ধির ফলে ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে।
- মুদ্রা ঝুঁকি (Currency Risk): বৈদেশিক মুদ্রার পরিবর্তনের কারণে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা।
২. ক্রেডিট ঝুঁকি (Credit Risk):
- ঋণগ্রহীতার দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোম্পানি যদি তার ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, তাহলে ঋণদাতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৩. তরলতা ঝুঁকি (Liquidity Risk):
- সম্পদকে দ্রুত নগদে রূপান্তর করতে না পারার ঝুঁকি। বাজারের অবস্থা খারাপ থাকলে সম্পদ বিক্রি করা কঠিন হতে পারে।
- অপারেশনাল ঝুঁকি (Operational Risk):
- অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া, মানুষ বা সিস্টেমের ত্রুটির কারণে ক্ষতির সম্ভাবনা। উদাহরণস্বরূপ, কম্পিউটার সিস্টেমের ব্যর্থতা বা মানবিক ভুল।
- আইনগত ঝুঁকি (Legal Risk):
- আইনগত বাধা বা পরিবর্তনের কারণে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা। নতুন আইন বা বিধির ফলে ব্যবসার মডেল পরিবর্তন করতে হতে পারে।
- রাজনৈতিক ঝুঁকি (Political Risk):
- রাজনৈতিক পরিবর্তন, বিদ্রোহ, বা স্থিতিশীলতার অভাবের কারণে ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা।
- প্রাকৃতিক ঝুঁকি (Natural Risk):
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, ভূমিকম্প, বা সাইক্লোনের কারণে সম্পদ ক্ষতির সম্ভাবনা।
আর্থিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উপায়:
- বিভিন্নীকরণ (Diversification): বিভিন্ন ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো।
- বীমা (Insurance): সম্ভাব্য ক্ষতির বিরুদ্ধে বীমা গ্রহণ।
- ঝুঁকি নিরূপণ এবং বিশ্লেষণ (Risk Assessment and Analysis): ঝুঁকির সম্ভাবনা ও প্রভাব বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ।
- হেজিং (Hedging): আর্থিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ঝুঁকি কমানো।
- নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Control Measures): অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্থাপন করে অপারেশনাল ঝুঁকি কমানো।
আর্থিক ঝুঁকি একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ব্যবসা এবং বিনিয়োগের, তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সচেতনতা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায় এবং স্থিতিশীল আর্থিক উন্নতি অর্জন করা সম্ভব।