ঝুঁকি পরিমাপের উৎকৃষ্ট পদ্ধতি কোনটি?
বিনিয়োগ এবং বীমা ক্ষেত্রে ঝুঁকি পরিমাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বিনিয়োগকারীদের এবং বীমা গ্রাহকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়। ঝুঁকি পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, তবে ভ্যালু অ্যাট রিস্ক (Value at Risk – VaR) বর্তমানে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। নিচে ঝুঁকি পরিমাপের কিছু প্রধান পদ্ধতি ও তাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো:
১. ভ্যালু অ্যাট রিস্ক (VaR):
সংজ্ঞা: ভ্যালু অ্যাট রিস্ক একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে একটি বিনিয়োগের সম্ভাব্য সর্বাধিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি বিনিয়োগের ১% VaR ১০ লাখ টাকা হয়, তবে এর অর্থ হল ১% সম্ভাবনা রয়েছে যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনিয়োগের ক্ষতি ১০ লাখ টাকার বেশি হবে না।
উদাহরণ: ঢাকার স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এ বিনিয়োগকারীরা VaR ব্যবহার করে তাদের পোর্টফোলিওর ঝুঁকি নির্ধারণ করতে পারেন। ধরুন, একটি বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওর ১ মাসের VaR ৫ লাখ টাকা, এর মানে আগামী এক মাসে পোর্টফোলিওর ক্ষতি ৫ লাখ টাকার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
২. স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন (Standard Deviation):
সংজ্ঞা: স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন একটি বিনিয়োগের আয়ের বৈচিত্র্য বা অস্থিতিশীলতা পরিমাপ করে। উচ্চ স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন নির্দেশ করে উচ্চ ঝুঁকি, কারণ আয়ের পরিবর্তন বেশি হয়।
উদাহরণ: বাংলাদেশে কিছু স্টকের স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন উচ্চ হওয়ায় সেগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। যেমন, প্রযুক্তি স্টকের স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন বেশি, কারণ তাদের আয় ও মূল্য বেশি ওঠানামা করে।
৩. বিটা (Beta):
সংজ্ঞা: বিটা একটি স্টকের বাজারের সাথে তুলনামূলক ঝুঁকি পরিমাপ করে। বিটা ১ এর বেশি হলে স্টকটি বাজারের তুলনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, এবং বিটা ১ এর কম হলে কম ঝুঁকিপূর্ণ।
উদাহরণ: গ্রামীণফোনের বিটা ১.২ হলে, এর মানে এটি বাজারের তুলনায় ২০% বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
৪. স্ট্রেস টেস্টিং এবং সিনারিও অ্যানালাইসিস (Stress Testing and Scenario Analysis):
সংজ্ঞা: এই পদ্ধতিগুলো ভবিষ্যতে সম্ভাব্য খারাপ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের ক্ষতি নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন দুর্যোগ বা বাজারের পতনকালীন অবস্থার প্রভাব বিশ্লেষণ করে।
উদাহরণ: ২০২৩ সালে সাইক্লোন ‘মোরান’ বাংলাদেশের অনেক ব্যবসাকে প্রভাবিত করেছিল। স্ট্রেস টেস্টিং ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব নির্ধারণ করতে পারে।
উপসংহার:
ভ্যালু অ্যাট রিস্ক (VaR) হল সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ঝুঁকি পরিমাপের পদ্ধতি, কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে। তবে, একটি পূর্ণাঙ্গ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য অন্যান্য পদ্ধতিগুলোরও সমন্বয় করা উচিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাজার পরিস্থিতিতে VaR এবং অন্যান্য পদ্ধতিগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করলে বিনিয়োগকারীরা তাদের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন এবং সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।